সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গত সোমবার সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস এই সতর্কবাণী
উচ্চারণ করেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় আরোপ করা লকডাউন বা
বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে ছয়টি পরামর্শ দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থা। এবার ওই ছয় পরামর্শের সঙ্গে লকডাউন প্রত্যাহারের আগে তিনটি
প্রশ্নের উত্তরও অনুসন্ধানের আহ্বান জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক। এগুলো
হলো: এক. মহামারি নিয়ন্ত্রণে এসেছে কি না? দুই. সংক্রমণ বাড়লে
স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বাড়তি চাপ নিতে সক্ষম কি না? তিন. জনস্বাস্থ্য
নজরদারি ব্যবস্থা কি রোগী ও তাঁর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে ও
সংক্রমণ বৃদ্ধি চিহ্নিত করতে সক্ষম?
তেদরোস
আধানোম বলেন, এই তিন প্রশ্নের উত্তর ইতিবাচক হলেও লকডাউন প্রত্যাহারের
বিষয়টি জটিল ও কঠিন। এ সময় তিনি দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও জার্মানির উদাহরণ
দেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রমিত এক রোগীর সংস্পর্শে আসা অনেক ব্যক্তিকে
চিহ্নিত করার পর পানশালা ও নৈশক্লাব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। চীনের উহানে
লকডাউন তুলে নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো রোগীর ক্লাস্টার চিহ্নিত হয়েছে। আর
জার্মানিতে বিধিনিষেধ শিথিল করার পর সংক্রমণ আরও বাড়তে শুরু করেছে। তবে এই
তিন দেশের সংক্রমণ বাড়লে তা শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার সক্ষমতা
রয়েছে উল্লেখ করে স্বস্তি প্রকাশ করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক।
তেদরোস আধানোম বলেন, ব্যাপক হারে সংক্রমণ ছড়ানো ঠেকাতে
বিভিন্ন দেশ কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল, কোথাও কোথাও যা লকডাউন নামে পরিচিত। এর
ফলে সংক্রমণ ছড়ানো ধীর হয়েছে। এই সময়কে কাজে লাগিয়ে অনেক দেশই পরীক্ষা,
রোগী শনাক্ত, পৃথক্করণ ও চিকিৎসা সক্ষমতা বাড়িয়েছে। এটাই হলো ভাইরাসের
সংক্রমণ ধীর করার এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ কমানোর সবচেয়ে সেরা উপায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, সুসংবাদ হলো,
কঠোর পদক্ষেপের ফলে ভাইরাসের সংক্রমণ ধীর করে দেওয়ার ও জীবন বাঁচানোর
ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। যদিও এসব পদক্ষেপের কারণে মূল্য দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘লকডাউনের ব্যাপক আর্থসামাজিক প্রভাব আমরা স্বীকার করি, যার
ফলে অনেক মানুষ দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।’
কাজেই জীবন ও জীবিকা রক্ষার্থে ধীরস্থিরভাবে লকডাউন শিথিল
করার ওপর জোর দেন তেদরোস আধানোম। তাঁর মতে, এই পদ্ধতিতে অর্থনীতি সচল করার
পাশাপাশি ভাইরাসের সংক্রমণের ওপর নজর রাখা সম্ভব। এতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার
মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।
তেদরোস আধানোম বলেন, প্রাথমিক গবেষণাগুলো থেকে জানা গেছে
যে করোনার সংক্রমণের পর অপেক্ষাকৃত অনেক মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি
হয়েছে। এর অর্থ হলো, বিশ্বের বেশির ভাগ জনগোষ্ঠী এখনো ভাইরাসটির সংক্রমণের
ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত এই ভাইরাসের
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক দেশই
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
মহাপরিচালক বলেন, অনেক শিশুই বিদ্যালয়ে ফিরছে। তবে এ ক্ষেত্রে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় অবশ্যই বিবেচনায়
নিতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম দুটি বিষয় হলো, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও এর
মারাত্মক দিক সম্পর্কে শিশুদের পরিষ্কার ধারণা আছে কি না এবং
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা রয়েছে কি না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক এ দিন কর্মস্থল খুলে
দেওয়া নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে সার্বিক পরিকল্পনার অংশ
হিসেবে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ ও প্রশমনেরও কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে। এই
পরিকল্পনার মধ্যে কর্মক্ষেত্র আবার খোলা, বন্ধ ও সংস্কারে স্বাস্থ্য
সুরক্ষা ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
0 Comments:
Post a Comment