Tuesday, June 30, 2020
Saturday, June 27, 2020
Friday, June 26, 2020
Ertugrul Ghazi Urdu part 1 to pat 51
Resurrection Ertugrul Season 1 Episode 47
Resurrection Ertugrul Season 1 Episode 46
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 45 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 44 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 43 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 42 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 41 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 39 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 38 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 37 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 36 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 35 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 34 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 33 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 32 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 31 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 30 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 29 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 28 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 27 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 26 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 25 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 24 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 23 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 22 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 21 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 20 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 19 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 18 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 17 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 16 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 15 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 14 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 13 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 12 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 11 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 10 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 9 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 8 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 7 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 6 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 5 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 4 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 3 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 2 | Season 1
Ertugrul Ghazi Urdu | Episode 1 | Season 1
Thursday, June 18, 2020
Wednesday, June 17, 2020
Wednesday, June 10, 2020
Saturday, June 6, 2020
Friday, June 5, 2020
Ore Batpar | ওরে বাটপার | New Natok 2020 | Shamim Hasan Sarkar | Chashi Alam | Bangla New Natok 2020
Ore Batpar | ওরে বাটপার | New Natok 2020 | Shamim Hasan Sarkar | Chashi Alam | Bangla New Natok 2020
Thursday, June 4, 2020
করোনা শনাক্ত ২৪২৩ জনের, মৃত্যু ৩৫
দেশে
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সংক্রমিত রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের দিনের
তুলনায় কমেছে। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪২৩ জন। মারা গেছেন ৩৫ জন।
সব মিলিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৫৭ হাজার ৫৬৩ জন। মোট মারা গেছেন ৭৮১ জন।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানানো হয়।
সবশেষ মারা যাওয়া ৩৫ জনের মধ্যে ২৯ জন পুরুষ, ৬ জন নারী।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে ৫৭১ জন। এ নিয়ে সর্বমোট ১২ হাজার ১৬১ জন সুস্থ হয়েছে।
ব্রিফিংয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ৬৯৪ জনের জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়।
গতকাল ১২ হাজার ৫১০ জনের করোনা পরীক্ষা করার কথা জানানো হয়েছিল।
দেশে এখন পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৮৭টি নমুনা।
দেশে এখন ৫০টি ল্যাবে (পরীক্ষাগার) করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্তের ঘোষণা আসে। ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
সব মিলিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৫৭ হাজার ৫৬৩ জন। মোট মারা গেছেন ৭৮১ জন।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানানো হয়।
সবশেষ মারা যাওয়া ৩৫ জনের মধ্যে ২৯ জন পুরুষ, ৬ জন নারী।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে ৫৭১ জন। এ নিয়ে সর্বমোট ১২ হাজার ১৬১ জন সুস্থ হয়েছে।
ব্রিফিংয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ৬৯৪ জনের জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়।
গতকাল ১২ হাজার ৫১০ জনের করোনা পরীক্ষা করার কথা জানানো হয়েছিল।
দেশে এখন পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৮৭টি নমুনা।
দেশে এখন ৫০টি ল্যাবে (পরীক্ষাগার) করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্তের ঘোষণা আসে। ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও শ্রমিক ছাঁটাই হবে: বিজিএমইএ সভাপতি
ঈদের ছুটির পর পোশাকশিল্পে যে শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে, তাকে অনাকাঙ্ক্ষিত
বাস্তবতা বলে উল্লেখ করেছেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর
সভাপতি রুবানা হক।
রুবানা হক বলেন, করোনার কারণে ৫৫ শতাংশ সক্ষমতা নিয়ে উৎপাদন চালাতে হলে কারখানাগুলোর পক্ষে শ্রমিক ছাঁটাই ছাড়া উপায় থাকবে না। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতা, কিন্তু করার কিছু নেই। অবশ্য হঠাৎ পরিস্থিতির উন্নতি হলে এই শ্রমিকেরাই অগ্রাধিকার পাবেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হওয়ায় পোশাক খাতে ৫০০ কোটি ডলার ক্ষতির ধাক্কা এসেছে।
এদিকে পোশাকশ্রমিকদের করোনাভাইরাস শনাক্তে গাজীপুরের চন্দ্রায় ডা. ফরিদা হক মেমোরিয়াল ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতালে আধুনিক পিসিআর ল্যাব স্থাপন করেছে পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আজ বৃহস্পতিবার ল্যাবটি উদ্বোধন করা হয়। একই সঙ্গে আয়োজিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক।
প্রশ্নের জবাবে রুবানা হক বলেন, এপ্রিল ও মে মাসে যেসব কারখানা শ্রমিক ছাঁটাই করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিজিএমইএ। তার বাইরে না। কারণ, ছাঁটাই অথবা কাজ দেওয়া এ দুটিই করতে হয় উদ্যোক্তাদের। তিনি বলেন, শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছ থেকে বড় একটা সহায়তা পেয়েছিলেন মালিকেরা। সেটি জুন মাসে শেষ হবে। তবে ৫৫ শতাংশ সক্ষমতায় কারখানা চালিয়ে শতভাগ কর্মী রাখা উদ্যোক্তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
ভিডিও কনফারেন্স ও অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও সাংসদ, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সাবেক সভাপতি মতিন চৌধুরী, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এ কে আজাদ খান প্রমুখ।
বিজিএমইএ জানায়, গাজীপুরের চন্দ্রায় স্থাপিত ল্যাবে প্রতিদিন ৪০০ নমুনা পরীক্ষা করা হবে। এ ছাড়া টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ল্যাব স্থাপনের পাশাপাশি আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিজিএমইএর সদস্য বড় কারখানার অনেক জায়গা রয়েছে। তারা নিজেদের শ্রমিকদের জন্য আইসোলেশন ইউনিট করতে পারে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক পোশাকশিল্পের মালিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘করোনা পরীক্ষা না করালে অনেকে আক্রান্ত হবেন। তাতে শিল্প চালানো মুশকিল হয়ে যাবে। তাই প্রয়োজন হলে আরও ল্যাব স্থাপন করুন। আক্রান্ত রোগীকে রাখার জন্য কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন ইউনিট করুন।’
রুবানা হক বলেন, করোনার কারণে ৫৫ শতাংশ সক্ষমতা নিয়ে উৎপাদন চালাতে হলে কারখানাগুলোর পক্ষে শ্রমিক ছাঁটাই ছাড়া উপায় থাকবে না। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতা, কিন্তু করার কিছু নেই। অবশ্য হঠাৎ পরিস্থিতির উন্নতি হলে এই শ্রমিকেরাই অগ্রাধিকার পাবেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হওয়ায় পোশাক খাতে ৫০০ কোটি ডলার ক্ষতির ধাক্কা এসেছে।
এদিকে পোশাকশ্রমিকদের করোনাভাইরাস শনাক্তে গাজীপুরের চন্দ্রায় ডা. ফরিদা হক মেমোরিয়াল ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতালে আধুনিক পিসিআর ল্যাব স্থাপন করেছে পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আজ বৃহস্পতিবার ল্যাবটি উদ্বোধন করা হয়। একই সঙ্গে আয়োজিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক।
প্রশ্নের জবাবে রুবানা হক বলেন, এপ্রিল ও মে মাসে যেসব কারখানা শ্রমিক ছাঁটাই করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিজিএমইএ। তার বাইরে না। কারণ, ছাঁটাই অথবা কাজ দেওয়া এ দুটিই করতে হয় উদ্যোক্তাদের। তিনি বলেন, শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছ থেকে বড় একটা সহায়তা পেয়েছিলেন মালিকেরা। সেটি জুন মাসে শেষ হবে। তবে ৫৫ শতাংশ সক্ষমতায় কারখানা চালিয়ে শতভাগ কর্মী রাখা উদ্যোক্তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
ভিডিও কনফারেন্স ও অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও সাংসদ, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সাবেক সভাপতি মতিন চৌধুরী, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এ কে আজাদ খান প্রমুখ।
বিজিএমইএ জানায়, গাজীপুরের চন্দ্রায় স্থাপিত ল্যাবে প্রতিদিন ৪০০ নমুনা পরীক্ষা করা হবে। এ ছাড়া টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ল্যাব স্থাপনের পাশাপাশি আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিজিএমইএর সদস্য বড় কারখানার অনেক জায়গা রয়েছে। তারা নিজেদের শ্রমিকদের জন্য আইসোলেশন ইউনিট করতে পারে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক পোশাকশিল্পের মালিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘করোনা পরীক্ষা না করালে অনেকে আক্রান্ত হবেন। তাতে শিল্প চালানো মুশকিল হয়ে যাবে। তাই প্রয়োজন হলে আরও ল্যাব স্থাপন করুন। আক্রান্ত রোগীকে রাখার জন্য কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন ইউনিট করুন।’
নতুন ‘স্বাভাবিকতার’ কালে স্বাগত
এমন অনিশ্চিত সময়ে মানুষ একজন পথপ্রদর্শক খোঁজে যে আশ্বাস দেবে সুদিনের; যে এমন দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, হাল ধরে নিয়ে যাবে স্থিতিশীল ভবিষ্যতের দিকে। আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের এত যুগের দুর্নীতি ও অপরাজনীতি চর্চায় মানুষ এখন মানুষের ওপর বিশ্বাস করা ছেড়ে দিয়েছে। কোনো প্রণোদনা এখন আর নিঃস্বার্থ মনে হয়ে না, কোনো প্রতিশ্রুতিতে এখন আর আস্থা হয় না। এই অনিশ্চিত সময়ে এই দায়িত্বহীন নেতা ও ভুয়া তথ্যের ভিড়ে মানুষ এখন দিশেহারা।
এমন দিগবিদিকজ্ঞানশূন্য অবস্থায় দুটি রাস্তা খোলা থাকে। এক. মানুষ অদৃশ্যের কাছে নিজের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে স্বস্তি পায়। দুই. মানুষ তার পূর্বপুরুষদের মধ্যে আশ্রয় খোঁজে। মানুষ তখন ধর্ম কিংবা জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠে। তাতেও যখন অনিশ্চয়তা দূর হয় না, তখন হতবিহ্বল হয়ে পড়া মানুষ প্রশ্ন করায়ও বারণ করে, আবার উগ্রও হয়ে উঠতে পারে। যেকোনো বিষয়ে বা মানুষের উগ্র পর্যায়ের বিশ্বাস তার অপ্রাপ্তিগুলো থেকে তৈরি যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ। যেন জোর করে নিজের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা। এই দুয়ের মাঝে আবার কেউ কেউ আটকা পড়ে যায়। বোঝে না কোন দিকে যাবে, কাকে বিশ্বাস করবে বা কী করবে? তারা অপেক্ষা করে। এই মধ্য পর্যায়ের মানুষগুলো হলো উল্লিখিত দুই ধারার লক্ষ্যস্থল। উভয় ধারাই চায় সদস্য বাড়িয়ে নিজেদের দল ভারী করতে। এসবের মধ্যে অনেকে অনেক সময় মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে পারে না। যার ফলস্বরূপ বিশ্বজুড়ে পারিবারিক নির্যাতন ও শিশু নির্যাতন বেড়ে যাচ্ছে এবং প্রমাণিত হচ্ছে, বাড়ি আসলে সবার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থান নয়।
এক-দুই সপ্তাহ করে করে দুটি মাস মানুষ স্বাভাবিক জীবন থেকে বিরতি নিয়েছে। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, এমন প্রতিশ্রুতি কেউ দেয়নি। লকডাউনের পর জীবন কেমন হবে, সে সম্পর্কে ধারণাও কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষ এক এক করে বের হচ্ছে তার দুমাস আগের জীবন ফিরে পেতে। যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন তাঁরা নতুন চাকরি খুঁজছেন। যাঁদের চাকরি আছে তাঁরা প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছেন চাকরি হারানোর ভয়ে। তরুণ জনশক্তি দুই মাস ধরে তাদের জীবন গড়ার স্বপ্নে লাগাম ধরে বসে আছে। তারা এখন উদ্বিগ্ন। বাজারে লেনদেন বা বেচা-কেনার মন্থর গতি। কেউ বলছেন মহামারি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে, আবার কেউ বলছেন লকডাউন শেষ। যে যা-ই বলছেন, খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বলছেন যেন তাঁর তথ্যটাই সঠিক। তবে আসল কথাটা হলো, আমরা আসলে জানি না কী হতে যাচ্ছে। আমাদের জীবন হয়তো আর কখনোই আগের মতো হবে না।
লকডাউনের এই তৃতীয় মাসে এসে আমরা এই নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলা শুরু করে দিয়েছি, যাকে অনেকেই বলছেন দ্য নিউ নরমাল বা ‘নতুন স্বাভাবিকতা’। এই নতুন স্বাভাবিকতা কেমন?
মানুষ এখন নিজের সঙ্গে, পরিবার, আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আবার নতুন করে যেন সম্পর্ক তৈরি করা শুরু করেছে। মানুষ মানুষের জন্য চিন্তা করছে, অন্যের কষ্টে এগিয়ে আসছে। কারও করোনা হয়েছে শুনলে তার খবরাখবর নিচ্ছে, কেউ চাকরি হারিয়েছেন শুনলে তাঁকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে। মানুষ বাড়িতে থেকে কাজ করছে, সুযোগ পাচ্ছে দুপুরগুলোকে উপভোগ করার বা কাজের ফাঁকে একটু গান শুনে নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখার। তবে এর সঙ্গে নতুন সমস্যাও যুক্ত হয়েছে। বাড়ি কর্মক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় কাজ ও জীবনের মধ্যেকার ভারসাম্যটা যেন উঠেই গেছে। মানুষ এখন আর মানুষের বাড়িতে আমন্ত্রিত নয়। মানুষের মনে করোনার ভয় মানসিক চাপ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকের আচরণ অসুস্থতার পর্যায়ে চলে গেছে।
এখনই সঠিক ও জনমুখী সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে এই বিশাল জনসংখ্যা নিয়ে আমরা পুরো জাতি মুখ থুবড়ে পড়ব। তৈরি পোশাক ও প্রবাসী আয়—অর্থনীতির দুই মূল চালিকাশক্তিই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই মহামারির ফলে। আমরা নতুন একটি বিশ্ব ব্যবস্থায় পা দিয়ে ফেলেছি। এখন সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, বাজার, শিক্ষা—সবকিছুতেই পরিবর্তন আসবে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে কী চলছে, তার সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুব কম। তথ্যের উৎস গণমাধ্যম, তারা নিজেরাই বিভিন্ন আইন-কানুন, নিয়ম-নীতির বেড়াজালে বাঁধা। মানুষের ওপর নজরদারি বেড়েছে অনেক বেশি। শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষের ধারণা হচ্ছে কম। দেশের ১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১০ কোটি মানুষই এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। এই বিশাল জনসংখ্যা ইন্টারনেটে কী করছে? মুঠোফোনেই এখন স্কুল, এখানেই অফিস, এখানেই বিনোদন। তাই মুঠোফোন এখন আর বাস্তবতা থেকে আড়াল হওয়ার জায়গা নয়। এই মুঠোফোনই হলো নতুন বাস্তবতা, নতুন পৃথিবীর জানালা।
১০ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে চাকরি হারানো মানুষগুলোও আছেন। বিভিন্ন সাইটে ঘুরে ঘুরে সময় নষ্ট করার অর্থ হলো রাস্তা-ঘাটে পার্কে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ানো। নিজের গন্তব্য নিজেই নির্ণয় করুন। জাতি হিসেবে কিংবা মানুষ হিসেবেই হয়তো আমাদের এক সহজাত প্রবৃত্তি হলো, আমরা বিপদে পড়লে নিজেকে অসহায় মনে করি আর অপেক্ষা করি কোনো এক ‘সুপার হিরো’ আসবে আমাদের রক্ষা করতে। বাস্তবতা হলো, নিজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে সবার আগে।
এ সময়কার বিখ্যাত পদার্থবিদ মিশিও কাকু বলেন, সামনের দিনে বাথরুমগুলো হবে আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্র। শরীরের তরল পরীক্ষা করে কমোড আমাদের জানাবে আমাদের শরীরের সব উপাদানের ভারসাম্য ঠিক আছে কি না। মানুষের চশমায় মাইক্রোচিপ বসানো থাকবে, যা সারাক্ষণ চোখ ও মনোযোগ নিরীক্ষা করে, মস্তিষ্কের ভাবনা বুঝে আমাদের সামনে সমাধানের উপায় জানাবে। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ইউভাল নোয়াহ হারারি বলেন, আগামী সময়টাতে মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হবে রোবট। কারণ মানুষের কর্মক্ষেত্রের বেশির ভাগ কাজ তারাই দখল করবে। রোবটকে এতটাই উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে যেন তারা মানুষের অনুভূতিও বুঝতে পারে। রোবটের সঙ্গে বিয়ে, সে তো এখন পুরোনো খবর।
মহাকাশে এখন প্রাইভেট কোম্পানির রকেট চলছে। অন্যান্য রাষ্ট্র যেভাবে নিজেদের উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে তাতে আর কয়েক বছরের মধ্যে মহাকাশে ভিড় হয়ে যাবে, চাঁদ ও মঙ্গলে জায়গা দখলের যুদ্ধ শুরু হবে। আমাজান ও গুগলের মতো কোম্পানি এখন মহাকাশে বিনিয়োগ করছে।
সমাজ, বিজ্ঞান, বিনোদন, যোগাযোগ—সব ক্ষেত্রে উদ্ভাবনের এমন রেনেসাঁর সময়ে আমরা কোথায় অবস্থান করছি? আমরা এই প্রতিযোগিতায় কেন অংশগ্রহণ করছি না। আমরা কেন নিজেদের পিছিয়ে রেখেছি নিম্ন আয়ের কাজগুলো করার জন্য? আমরা জাতি হিসেবে নিজেদের নিয়ে অনেক গর্ব করতে পারি কিন্তু আমাদের বৈশ্বিক অবস্থানটা কোথায় এবং কেমন, সেটাও দেখতে হবে এই বৈশ্বিক শাসনের যুগে।
এই নতুন বিশ্বব্যবস্থায় নিজেদের অবস্থার উন্নতি করতে নিজেদের ‘ফেক’ দাম্ভিকতা থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবমুখী হতে হবে। নিজেদের দুর্বলতাগুলো শুধরে, নিজেকে সময়ের উপযোগী করে প্রস্তুত করাই ‘নতুন স্বাভাবিকতা’। ১০০ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অন্যের জীবনে উঁকি না মেরে সময়োপযোগী কোনো কাজ বা দক্ষতা শিখুন এই সুযোগকে ব্যবহার করে। আমাদের হাতেই আছে আমাদের ভবিষ্যৎ। তা গণনার জন্য জ্যোতিষীর প্রয়োজন নেই। আমরা সবাই আমাদের ভাগ্যের লেখক। নিজেদের দায়িত্বটুকু কেবল বুঝে নেওয়ার পালা। ‘নতুন স্বাভাবিকতা’ হলো তরুণদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। ‘নতুন স্বাভাবিকতা’ হলো জনগণের ওপর বিনিয়োগ করে, সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে, প্রযুক্তির এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা। দারিদ্র্য অর্থনৈতিক নয়। ‘নতুন স্বাভাবিকতায়’ দারিদ্র্য হচ্ছে প্রযুক্তিগত ভাবে পিছিয়ে থাকা।
লকডাউনে ‘সুখী ও স্বস্তিতে’ ঢাকাকে ঘিরে থাকা ৫ নদ-নদী
করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের ঘোষণা করা সাধারণ ছুটির মধ্যে ঢাকার
আশপাশের পাঁচটি নদ-নদীর পানির মানের উন্নতি হয়েছে। বিভিন্ন নিরিখে
বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর পানির মান দ্বিগুণেরও
বেশি উন্নত হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণে এ চিত্র উঠে
এসেছে।
পানি বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর দূষণের মূল দুই উৎসের অন্যমত শিল্পবর্জ্য। করোনার সাধারণ ছুটির সময় কলকারখানা বন্ধ ছিল। তাই স্বভাবতই পানির মান বাড়বে, এটা প্রত্যাশিত। তবে দূষণের আরেক উৎস ওয়াসার পয়োবর্জ্য বন্ধ হয়নি। এটি বন্ধ হলে পানির মান আরও ভালো হতো।’
নদীদূষণ পরিমাপে অন্যতম এক মাপকাঠি হলো পানির দ্রবীভূত অক্সিজেনের (ডিও) মান নিরূপণ। প্রতি লিটার পানিতে ন্যূনতম ৫ মিলিগ্রাম ডিও থাকলে ওই পানি মানসম্পন্ন বলে বিবেচনা করা হয়। পানির মান বিবেচনার ক্ষেত্রে বিওডি (জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের চাহিদা) এবং সিওডি (অজৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের চাহিদা) আরও দুই মানদণ্ড। এ দুটোর পরিমাণ বেড়ে গেলে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। এ দুইয়ের পরিমাণ কমে যাওয়ার অর্থ হলো দূষণের মাত্রা কমে যাওয়া। এর মানে হলো, দ্রবীভূত অক্সিজেন বেড়ে যাওয়া।
পরিবেশ অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর নানা পয়েন্ট থেকে নিয়মিত পানির মান পরীক্ষা করে। নদীগুলোর দূষণ সাধারণত শুরু হয় নভেম্বর মাস থেকে। দিন দিন তা বাড়তে থাকে। এপ্রিল মাসে দূষণ চরম অবস্থায় পৌঁছায়। এপ্রিল মাসকেই দূষণের সবচেয়ে বড় সময় বলে মনে করে অধিদপ্তর। সরকারি এ দপ্তরের গত তিন বছরের পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা গেছে, পাঁচ নদীর পানির মান চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বেশ বেড়েছে।
ঢাকার একেবারে গা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া নদী বুড়িগঙ্গা। গত বছরে (২০১৯) বুড়িগঙ্গার মিরপুর ব্রিজের কাছের পানিতে ডিওর পরিমাণ ছিল শূন্য শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক শূন্য ২ মিলিগ্রাম। গত বছরের এপ্রিলে বিওডি ছিল ২০ মিলিগ্রাম। এ বছরও এর মানের কোনো হেরফের হয়নি। তবে গত বছর এপ্রিলে এখানকার পানিতে সিওডি ছিল ৯২ মিলিগ্রাম, যা এবার ৭৬ মিলিগ্রাম।
গাবতলী ব্রিজের কাছে তুরাগ নদে গত বছরের এপ্রিল মাসে ডিও ছিল শূন্য দশমিক ১২ মিলিগ্রাম। এ বছর এর ডিওর পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। আশুলিয়ায় তুরাগের ডিও গেল বছর ছিল শূন্য মিলিগ্রাম। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
শিল্পবর্জ্যের দূষণে বিপর্যস্ত শীতলক্ষ্যা। নদীর দুপাশ দিয়ে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানার অনেকগুলোরই বর্জ্য শোধনাগার নেই। সেই দূষণের নদীতেও এবার এসেছে প্রাণ। এ নদীর ডেমরা ঘাট ও এসিআই এলাকায় গত বছর ডিও ছিল যথাক্রমে ১ ও ১ দশমিক ২ মিলিগ্রাম। এবার তা হয়েছে ১ দশমিক ৩১ এবং ১ দশমিক ২৪ মিলিগ্রাম।
বালু নদের দূষণচিত্রেও আশাব্যঞ্জক ফল। এ নদীর হোসেন ডায়িং এলাকার পয়েন্টে গত বছর পানিতে ডিওর পরিমাণ ছিল শূন্য দশমিক ১ মিলিগ্রাম। এবার তা হয়েছে শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ। নদের বালু ব্রিজ পয়েন্টে গত বছরের এপ্রিলে পানিতে ডিওর পরিমাণ ছিল শূন্য, এবার হয়েছে ১ দশমিক ২২ মিলিগ্রাম।
পাঁচ নদ-নদীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মান বেড়েছে ধলেশ্বরী নদীর পানির। এ নদীতে এ বছর এপ্রিলে ডিওর পরিমাণ ন্যূনতম নির্ধারিত মাত্রা অর্থাৎ ৫ মিলিগ্রাম ছাড়িয়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১। গত বছর এ মাসেই এর মান ছিল ২ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম।
ধলেশ্বরীর এ পয়েন্টে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের পানির মানও পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, ওই মাসে এ পয়েন্টে পানির ডিও ছিল ১ দশমিক ৩৫ মিলিগ্রাম।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘লকডাউনের সময় আমরা কিছু নমুনা নিয়েছি। প্রতিটি নিরিখেই ঢাকার আশপাশের নদ-নদীগুলোর পানির মানের উন্নতি লক্ষ করেছি। মানুষের নানাবিধ কাজ কমে যাওয়ার ফলেই এই উন্নয়ন।’
রফিক আহম্মদের মতে, ঢাকার নদ-নদীগুলোর দূষণের প্রধান দুই উৎস শিল্পবর্জ্য এবং ওয়াসার পয়োবর্জ্য। এর পাশাপাশি আছে নৌযানের জ্বালানিবর্জ্য।
প্রথম আলো ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকার কাছের শ্যামপুর-কদমতলী শিল্প এলাকার শিল্পদূষণ নিয়ে একটি গবেষণা করে। ওই শিল্প এলাকার নামা শ্যামপুর বস্তি, শ্যামপুর লঞ্চঘাট এলাকা এবং এ ঘাটের কাছে বুড়িগঙ্গা থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়। তিন জায়গার তিন বোতল পানি ওই দিনই দেওয়া হয় বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ ট্রেনিং অ্যান্ড কনসালটেশনে (বিআরটিএ)।
পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-১৯৯৭ অনুযায়ী, শিল্পবর্জ্য বহন করা পানিতে বিওডির সহনীয় মাত্রা প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম এবং সিওডির ২০০ মিলিগ্রাম। শ্যামপুরে নামা বস্তিতে বিওডির পরিমাণ ১২০ মিলিগ্রাম আর সিওডি ৩৫৮ মিলিগ্রাম। লঞ্চঘাটে যেখানে এই শিল্পের বর্জ্য গিয়ে বুড়িগঙ্গায় পড়ছে, সেখানে বিওডি ৩০৪ মিলিগ্রাম এবং সিওডি ৫৪৯ মিলিগ্রাম। শিল্পবর্জ্যে হাইড্রোজেন সালফাইডের সহনীয় মাত্রা এক মিলিগ্রাম। কিন্তু নামা শ্যামপুরের পানিতে এর পরিমাণ ১২৫ মিলিগ্রাম আর লঞ্চঘাটে ৯০ মিলিগ্রাম।
লকডাউনের ফলে এই শিল্প বর্জ্যের দূষণ থেকে রেহাই পেলেও ওয়াসার পয়োবর্জ্য এখনো একটি বড় দূষণকারী হিসেবে রয়ে গেছে বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সোবহান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন রাজধানীতে ১৫ লাখ ঘনমিটার পয়োবর্জ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে ১৪ লাখ ঘনমিটারই অপরিশোধিত অবস্থায় ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলোতে গিয়ে মেশে। এর থেকে নিষ্কৃতি না পেলে নদীগুলোর রক্ষা নেই।
ঢাকার নদীর প্রকৃত দূষণকারী কে এবং কারা কতটুকু করছে, এ নিয়ে মতভেদ যে আছে তা স্বীকার করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘ওয়াসাকে ধরলে তারা শিল্পমালিকদের দোষ দেয় আবার শিল্পমালিকদের বললে তাঁরা ওয়াসাকে দোষ দেন। দুপক্ষকে একসঙ্গে বসালে তারা বলে, আরও ভিন্ন উৎসও তো আছে।’
উৎস নিয়ে মতভেদ থাকুক। কিন্তু দূষণ যে চূড়ান্ত মাত্রায়, তা নিশ্চিত। আর তা হচ্ছে মানুষের অন্যায্য ক্রিয়াকর্ম, এমন মন্তব্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের। এই পরিবেশবিদের কথা হলো, ‘অনেক ক্ষতির মধ্যে করোনা আমাদের একটি শিক্ষা দিল যে, আমাদের আচরণের জন্যই এই দূষণ। এখন এই আচরণ পাল্টাতে হবে। এবার প্রকৃতির ওপর মানুষের অন্যায্য আচরণ একটু কমেছে বলে পানির হাল ফিরেছে।’
করোনার এই মহামারির মধ্যেই ৫ জুন পালিত হবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবার জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউনেপ) এই দিবসে থিম নির্ধারণ করেছে ‘টাইম ফর নেচার’ বা সময়টা প্রকৃতির। প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার কথা আছে এবারের আহ্বানে। পরিবেশকর্মীরা এখন বলছেন, দূষণ কমে নদীগুলোর এই যে হাল ফিরল, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনের পরিকল্পনা নিতে হবে। আর এ জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘নদীগুলোর পানির মান বৃদ্ধি একটি ভালো খবর। একে আমরা ধরে রাখতে চাই। এ জন্য অবশ্য মানুষকে সচেতন হতে হবে। তবে আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে।’
পানি বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর দূষণের মূল দুই উৎসের অন্যমত শিল্পবর্জ্য। করোনার সাধারণ ছুটির সময় কলকারখানা বন্ধ ছিল। তাই স্বভাবতই পানির মান বাড়বে, এটা প্রত্যাশিত। তবে দূষণের আরেক উৎস ওয়াসার পয়োবর্জ্য বন্ধ হয়নি। এটি বন্ধ হলে পানির মান আরও ভালো হতো।’
নদীদূষণ পরিমাপে অন্যতম এক মাপকাঠি হলো পানির দ্রবীভূত অক্সিজেনের (ডিও) মান নিরূপণ। প্রতি লিটার পানিতে ন্যূনতম ৫ মিলিগ্রাম ডিও থাকলে ওই পানি মানসম্পন্ন বলে বিবেচনা করা হয়। পানির মান বিবেচনার ক্ষেত্রে বিওডি (জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের চাহিদা) এবং সিওডি (অজৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের চাহিদা) আরও দুই মানদণ্ড। এ দুটোর পরিমাণ বেড়ে গেলে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। এ দুইয়ের পরিমাণ কমে যাওয়ার অর্থ হলো দূষণের মাত্রা কমে যাওয়া। এর মানে হলো, দ্রবীভূত অক্সিজেন বেড়ে যাওয়া।
পরিবেশ অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর নানা পয়েন্ট থেকে নিয়মিত পানির মান পরীক্ষা করে। নদীগুলোর দূষণ সাধারণত শুরু হয় নভেম্বর মাস থেকে। দিন দিন তা বাড়তে থাকে। এপ্রিল মাসে দূষণ চরম অবস্থায় পৌঁছায়। এপ্রিল মাসকেই দূষণের সবচেয়ে বড় সময় বলে মনে করে অধিদপ্তর। সরকারি এ দপ্তরের গত তিন বছরের পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা গেছে, পাঁচ নদীর পানির মান চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বেশ বেড়েছে।
ঢাকার একেবারে গা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া নদী বুড়িগঙ্গা। গত বছরে (২০১৯) বুড়িগঙ্গার মিরপুর ব্রিজের কাছের পানিতে ডিওর পরিমাণ ছিল শূন্য শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক শূন্য ২ মিলিগ্রাম। গত বছরের এপ্রিলে বিওডি ছিল ২০ মিলিগ্রাম। এ বছরও এর মানের কোনো হেরফের হয়নি। তবে গত বছর এপ্রিলে এখানকার পানিতে সিওডি ছিল ৯২ মিলিগ্রাম, যা এবার ৭৬ মিলিগ্রাম।
গাবতলী ব্রিজের কাছে তুরাগ নদে গত বছরের এপ্রিল মাসে ডিও ছিল শূন্য দশমিক ১২ মিলিগ্রাম। এ বছর এর ডিওর পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। আশুলিয়ায় তুরাগের ডিও গেল বছর ছিল শূন্য মিলিগ্রাম। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
শিল্পবর্জ্যের দূষণে বিপর্যস্ত শীতলক্ষ্যা। নদীর দুপাশ দিয়ে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানার অনেকগুলোরই বর্জ্য শোধনাগার নেই। সেই দূষণের নদীতেও এবার এসেছে প্রাণ। এ নদীর ডেমরা ঘাট ও এসিআই এলাকায় গত বছর ডিও ছিল যথাক্রমে ১ ও ১ দশমিক ২ মিলিগ্রাম। এবার তা হয়েছে ১ দশমিক ৩১ এবং ১ দশমিক ২৪ মিলিগ্রাম।
বালু নদের দূষণচিত্রেও আশাব্যঞ্জক ফল। এ নদীর হোসেন ডায়িং এলাকার পয়েন্টে গত বছর পানিতে ডিওর পরিমাণ ছিল শূন্য দশমিক ১ মিলিগ্রাম। এবার তা হয়েছে শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ। নদের বালু ব্রিজ পয়েন্টে গত বছরের এপ্রিলে পানিতে ডিওর পরিমাণ ছিল শূন্য, এবার হয়েছে ১ দশমিক ২২ মিলিগ্রাম।
পাঁচ নদ-নদীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মান বেড়েছে ধলেশ্বরী নদীর পানির। এ নদীতে এ বছর এপ্রিলে ডিওর পরিমাণ ন্যূনতম নির্ধারিত মাত্রা অর্থাৎ ৫ মিলিগ্রাম ছাড়িয়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১। গত বছর এ মাসেই এর মান ছিল ২ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম।
ধলেশ্বরীর এ পয়েন্টে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের পানির মানও পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, ওই মাসে এ পয়েন্টে পানির ডিও ছিল ১ দশমিক ৩৫ মিলিগ্রাম।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘লকডাউনের সময় আমরা কিছু নমুনা নিয়েছি। প্রতিটি নিরিখেই ঢাকার আশপাশের নদ-নদীগুলোর পানির মানের উন্নতি লক্ষ করেছি। মানুষের নানাবিধ কাজ কমে যাওয়ার ফলেই এই উন্নয়ন।’
রফিক আহম্মদের মতে, ঢাকার নদ-নদীগুলোর দূষণের প্রধান দুই উৎস শিল্পবর্জ্য এবং ওয়াসার পয়োবর্জ্য। এর পাশাপাশি আছে নৌযানের জ্বালানিবর্জ্য।
প্রথম আলো ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকার কাছের শ্যামপুর-কদমতলী শিল্প এলাকার শিল্পদূষণ নিয়ে একটি গবেষণা করে। ওই শিল্প এলাকার নামা শ্যামপুর বস্তি, শ্যামপুর লঞ্চঘাট এলাকা এবং এ ঘাটের কাছে বুড়িগঙ্গা থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়। তিন জায়গার তিন বোতল পানি ওই দিনই দেওয়া হয় বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ ট্রেনিং অ্যান্ড কনসালটেশনে (বিআরটিএ)।
পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-১৯৯৭ অনুযায়ী, শিল্পবর্জ্য বহন করা পানিতে বিওডির সহনীয় মাত্রা প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম এবং সিওডির ২০০ মিলিগ্রাম। শ্যামপুরে নামা বস্তিতে বিওডির পরিমাণ ১২০ মিলিগ্রাম আর সিওডি ৩৫৮ মিলিগ্রাম। লঞ্চঘাটে যেখানে এই শিল্পের বর্জ্য গিয়ে বুড়িগঙ্গায় পড়ছে, সেখানে বিওডি ৩০৪ মিলিগ্রাম এবং সিওডি ৫৪৯ মিলিগ্রাম। শিল্পবর্জ্যে হাইড্রোজেন সালফাইডের সহনীয় মাত্রা এক মিলিগ্রাম। কিন্তু নামা শ্যামপুরের পানিতে এর পরিমাণ ১২৫ মিলিগ্রাম আর লঞ্চঘাটে ৯০ মিলিগ্রাম।
লকডাউনের ফলে এই শিল্প বর্জ্যের দূষণ থেকে রেহাই পেলেও ওয়াসার পয়োবর্জ্য এখনো একটি বড় দূষণকারী হিসেবে রয়ে গেছে বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সোবহান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন রাজধানীতে ১৫ লাখ ঘনমিটার পয়োবর্জ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে ১৪ লাখ ঘনমিটারই অপরিশোধিত অবস্থায় ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলোতে গিয়ে মেশে। এর থেকে নিষ্কৃতি না পেলে নদীগুলোর রক্ষা নেই।
ঢাকার নদীর প্রকৃত দূষণকারী কে এবং কারা কতটুকু করছে, এ নিয়ে মতভেদ যে আছে তা স্বীকার করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘ওয়াসাকে ধরলে তারা শিল্পমালিকদের দোষ দেয় আবার শিল্পমালিকদের বললে তাঁরা ওয়াসাকে দোষ দেন। দুপক্ষকে একসঙ্গে বসালে তারা বলে, আরও ভিন্ন উৎসও তো আছে।’
উৎস নিয়ে মতভেদ থাকুক। কিন্তু দূষণ যে চূড়ান্ত মাত্রায়, তা নিশ্চিত। আর তা হচ্ছে মানুষের অন্যায্য ক্রিয়াকর্ম, এমন মন্তব্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের। এই পরিবেশবিদের কথা হলো, ‘অনেক ক্ষতির মধ্যে করোনা আমাদের একটি শিক্ষা দিল যে, আমাদের আচরণের জন্যই এই দূষণ। এখন এই আচরণ পাল্টাতে হবে। এবার প্রকৃতির ওপর মানুষের অন্যায্য আচরণ একটু কমেছে বলে পানির হাল ফিরেছে।’
করোনার এই মহামারির মধ্যেই ৫ জুন পালিত হবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবার জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউনেপ) এই দিবসে থিম নির্ধারণ করেছে ‘টাইম ফর নেচার’ বা সময়টা প্রকৃতির। প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার কথা আছে এবারের আহ্বানে। পরিবেশকর্মীরা এখন বলছেন, দূষণ কমে নদীগুলোর এই যে হাল ফিরল, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনের পরিকল্পনা নিতে হবে। আর এ জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘নদীগুলোর পানির মান বৃদ্ধি একটি ভালো খবর। একে আমরা ধরে রাখতে চাই। এ জন্য অবশ্য মানুষকে সচেতন হতে হবে। তবে আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে।’